মহীনের ঘোড়াগুলি আমার প্রিয় একটি ব্যান্ড। তাঁদের গানের কথা, সুর, গায়কী -সবই ভালো লাগে। তাঁদের নিয়ে লিখতে গিয়ে শুরু করি খাপছাড়া ভাবে। প্রথমে তাঁদের নিজস্ব অ্যালবাম(সত্তরের দশকের) নিয়ে কিছু লিখলাম (আমার আগের পোস্ট দ্রষ্টব্য)। আজ লিখব মহীনের ঘোড়াদের নিয়ে। আর ব্যান্ডের ইতিহাস, খুঁটিনাটি তথ্য-এইসব নিয়ে লিখব আরেকদিন। আরেকদিন হয়তোবা লিখব তাঁদের “আবার বছর কুড়ি” পর ফিরে আসার ইতিহাস, আবেগ নিয়ে। লিখব তাঁদের পরবর্তী সম্পাদিত অ্যালবাম নিয়েও। জানবো অনেককিছু। জানাবোও অনেককিছু। তবে আগেই একটি বিষয়ে একটু বলে রাখি। এখানে যা লিখবো সবই আমার লেখা হবে না। প্রয়োজনে বই/ অ্যালবাম কভার/পত্রিকা ইত্যাদি থেকে হুবুহু বহু লাইন টাইপ করে তুলে দিব। অনেক ইংরেজী বক্তব্যকে বাংলায় অনুবাদ করে লিখে দিব। আশা করি তা উচিৎ হবে। সবাই যতটুকু জানতে পারি ততটুকুই লাভ। তাহলে শুরু করি। আজ লিখব বরাবরই সময়ের আগে ছুটে চলা কিছু অদ্ভুত ঘোড়াদের নিয়ে।

 

১। গৌতম চট্টোপাধ্যায়

“দীপক মজুমদার” ১৯৭৫ সালে কৃত্তিবাসে মহীনের ঘোড়াগুলি নিয়ে লেখেন “শহরটা ধীরে ধীরে বাবু ও বেশ্যাদের দখলে চলে গিয়েছে। এর মধ্যে বাঁচতে চাওয়ার মধ্যে যে ত্যাগ ও আনন্দলোভী লড়াই- এর চর্যা দরকার তা কি এদের মনে ধরবে? জেনিস, তুমি বলেছিলে ‘ক্রাই বেবি ক্রাই’, এরা কি চাইবে তেমন ক্রুব্ধ কান্না কাঁদতে! সেইসব রতি সুখসারের খবর কি এদের জানা?”– উনি ওই সময়ে কলকাতার পরিবেশ, ঘোড়াদের বয়স ইত্যাদি নিয়ে এই কথাগুলো বলেন এবং একি সাথে এই কারনে তাঁর মধ্যে যে উদ্যেগ তৈরী হয় তা প্রকাশ করেন এই ভাবে- “বাংলা ভাষায় রক বা ঝাঁকুনির জন্য আমি মুষ্টি উত্তেলিত রাখছি। কিন্তু নামিয়ে না নিতে হয়! কেন এত আশঙ্কা? দূষিত পরিবেশ ময়াল সাপের মতো এইসব অপাপবিদ্ধ শিশুতীর্থ ঘিরে ধরেছে। শের খাঁরা চতুর্দিকে। এর মধ্যে শমনের ধর্ম শিখতে হবে, গানকে মন্ত্রাচারে পরিণত করতে হবে, গান নিয়ে অনুষঙ্গ করতে হবে……” হ্যাঁ। ঘোড়ারা পেরেছিল। এই পরিবেশেও তাঁরা তাঁদের জয়রথ থামাতে দেয়নি। তাইতো তিনি আরো লিখলেন, “ঘোড়াগুলির স্বাস্থ্য ভালো, গলা খারাপ নয়, হাত তো চমৎকার মুষ্টিবদ্ধ।” অথবা একদম শেষে বললেন “প্রসঙ্গতঃ এদের একটি রেকর্ড আছে, নামঃ সংবিগ্ন পাখিকুল ও কলকাতা বিষয়ক। পাঠক যথাশীঘ্রসম্ভব কিনুন, ঠকবেন না, একটা অভিজ্ঞতা হবে অন্যধরণের বাংলা গান শোনার।” হ্যাঁ, এই অন্যধরণের বাংলা গান নিয়েই মহীনের ঘোড়াগুলি সারাজীবন কাজ করে গেল এবং তাঁর নেপথ্যের মূল জয়গান গাইলেন অন্যরকম একজন মানুষ- গৌতম চট্টোপাধ্যায়।

 

 

গৌতম চট্টোপাধ্যায় একাধারে ছিলেন গায়ক, সুরকার, গীতিকার, পরিচালক ইত্যাদি। তবে এভাবে বলে আসলে বুঝানো যাবে না যে উনি কি পারতেন আর কি করতেন। যখন যেটা করতে ইচ্ছে বা ভালো লাগতো তিনি সেটাই করতেন এবং ভালোভাবেই করতেন। গ্র্যাজুয়েট করেছিলেন সাইকোলোজিতে, কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে। এই সময়ই তিনি নাকশাল আন্দোলনে যোগ দেন এবং কিছুদিন জেলও খাটেন। তারপর কলকাতা ছেড়ে জাবালপুর চলে যান এবং প্রায় বছরখানেক মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে কাজ করেন। তারপর ভোপাল হয়ে ফিরে আসেন কলকাতায়। ফিরে এসেই গঠন করেন ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’।

 

ছোটবেলা থেকেই তিনি বিভিন্ন ধরনের দেশি এবং বিদেশি বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারতেন। ‘The Urge’ নামক একটি ব্যান্ডের হয়ে ’৬০ এর দিকে বিভিন্ন হোটেলে লিড গীটার বাজাতেন। কলকাতা ফিরে এসেই তিনি তাঁর দুই ভাই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ(বিশু) চট্টোপাধ্যায়; কাজিন রঞ্জন ঘোষাল, বিশ্বনাথের বন্ধু আব্রাহাম মজুমদার এবং পারিবারিক বন্ধু তপেশ বন্দোপাধ্যায় (ভানু) ও তাপস দাস (বাপি) কে নিয়ে গঠন করেন ‘সপ্তর্ষী’ নামক একটি ব্যান্ড। এই ‘সপ্তর্ষী’ পরে মহীনের ঘোড়াগুলি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

 


[বাঁ থেকে রাজা ব্যানার্জী, প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, তাপস দাস, প্রণব সেনগুপ্ত, গৌতম চট্টোপাধ্যায়, রঞ্জন ঘোষাল। ছবিটি ১৯৭৯ সালে তোলা, রবীন্দ্র সদনের একটি কনসার্টে]

 

তিনি মহীনের ঘোড়াগুলি-কে পরিচয় করিয়ে দেন বিভিন্ন ধরনের বাদ্য যন্ত্রের সাথে, নতুন ধরনের গানের সাথে। গীটার, স্যাক্সোফোন, ড্রামস ইত্যাদির সাথে একতারা, ভায়োলিন, বাঁশি ইত্যাদির সংমিশ্রন ঘটে। বাউল, রক, ল্যাটিন মিউজিক(ট্যাঙ্গো, সালসা)-এইসব কে মিশিয়ে, নেড়েচেড়ে তৈরি করেন নতুন আরেক গানের জগৎ। লিরিক্সে ভিন্নধর্মিতা, বাজানোয় ভিন্নধর্মিতা, গায়কীতে ভিন্নধর্মিতা ইত্যাদি সব মিলিয়ে গানগুলোকে এমন এক রুপ দিয়েছিলেন যা ঐ সময়ের জন্য একটি বিপ্লব, একটি সাহসী পদক্ষেপ। তিনি বাঙ্গালীকে বুঝাতে সক্ষম হন যে শুধুমাত্র গীটার দিয়েও গান করা যায়। সময়ের আগে ধাবিত হওয়া গানের দলটি পরিচালিত, সংঘটিত হয়েছিল গৌতম চট্টোপাধ্যায় নামক এক সাবলীল এবং গুণী দলনেতার কারনে। সত্তর দশকে এই ধরনের গান বুঝতে পারা, এই ধরনের গানকে গ্রহন করার মত মানুষ ছিল কম। এই ব্যান্ডকে ধারন করে রাখার মত শক্তি ছিল না সেই সময়ের সঙ্গীত প্রতিষ্ঠানগুলোর। ফলস্বরুপ তিনটি অ্যালবাম, গোটা পনেরো অনুষ্ঠান করেই তখনকার মতন বিদায় নেয় মহীনের ঘোড়াগুলি।

 

ব্যান্ড ভেঙ্গে যাওয়ার পর তিনি নিজের গানের জগৎকে একাই টেনে নিতে থাকেন। বিভিন্ন ছবিতে মিউজিক কম্পোজ করেন। এবং এই সময়েই শুরু করেন ছবি বানানো। তাঁর প্রথম ছবি ‘নাগমতি’, যার জন্য ১৯৮৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। তাঁর দ্বিতীয় ছবি ছিল ‘সময়’, যা প্রকাশিত হয়নি। তিনি কিছু ডকুমেন্টারি তৈরী করেন। ঢোলক দের নিয়ে তৈরি করেন The Primal Call। আরো বিভিন্ন বিষয়ের উপর তিনি ডকুমেনটারি তৈরী করেন। এক আমেরিকান টেলিভিশন গোষ্ঠীর জন্য তৈরী করেন-To Love is to Paint। এসব করতে করতেই একদিন কারবী অ্যাংলো প্রদেশে যান সেখানের গান নিয়ে কাজ করার জন্য। ‘হাই-মু’ নামক একটি অপেরা হাউজের মতন তৈরী করেন যেখানে একবার তিনশত শিল্পী পারফর্ম করেন। এই ঘটনা সেখানকার মানুষকে ভালোমতই নাড়া দেয়। এর থেকে উৎসাহিত হয়েই তিনি তাঁর তৃতীয় ছবি করার সিদ্ধান্ত নেন। ‘রং-বীন’ নামক এই ছবি অসম্পুর্নই থেকে যায় তাঁর অকস্মাৎ মৃত্যুর কারনে।

 

১৯৯৫-এর বইমেলায় আবার মহীনের ঘোড়াগুলি ফিরে আসে গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে। ‘আবার বছর কুড়ি’ পরে দিয়ে মহীনের ঘোড়াগুলি’র পুনরাবির্ভাব ঘটে। এক্ষেত্রে জয়জিৎ লাহিড়ী’র কিছু কথা তুলে না দিলেই নয়-“শুরু হল অনুসন্ধান। আপন কুলপরিচয় জানার মত অপ্রতিরোধ্য তাগিদে শেষে খুঁজে পাওয়া গেল তাঁকে। “আমাদের গান এখনো গাওয়া হয় কলেজ ক্যান্টিনে? ভাল লাগে তোদের?” অবাক বিষ্ময়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিলেন তিনি। উঠে বসেছিলেন আধশোয়া শয্যা ছেড়ে। আর তারই ফলশ্রুতি পরের বছর বইমেলায় “আবার কুড়ি বছর পর”। এরপর ক্রমান্বয়ে আসবে “ঝরা সময়ের গান”, “মায়া”, “ক্ষ্যাপার গান”। শুরু হবে আলোচনা, লেখালেখি। নতুন করে ঔৎসক্য সৃষ্টি হবে ঘোড়াদের গতিময় অতীত সম্পর্কে। ইতিহাসের পাতায় নিজেদের ন্যয্য দখল, নিশ্চিতভাবে কায়েক করবে মহীনের ঘোড়ারা।


কুড়ি বছরের ব্যবধানে উৎপন্ন এই বিপরীতধর্মী প্রতিক্রিয়ার একটি কারণ যদি হয় শ্রোতাদের নতুন গান শোনার আগ্রহ, অপর কারণ অবশ্যই লিরিসিস্ট গৌতমের আত্মপ্রকাশ। মহীনের গৌতম ছিলেন মূলতঃ সুরকার গায়ক ও যন্ত্রী। অথচ ১৯৯৫ থেকে শুরু তাঁর ইনিংসে দেখি যন্ত্র এবং গলার দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছেন নতুন প্রজন্মেকে। নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন দুই সোনার কাঠি, রূপোর কাঠি – কথা ও সুর। গৌতমের কথা, ‘মহীনে’র মতই কবিত্মময় এবং প্রয়োজনীয়, স্হির-লক্ষ্য, আমোঘ।”

 

জীবনমুখী গানের ধারার আদিস্রষ্টা গৌতম চট্টোপাধ্যায় ১৯৯৯ সালে মৃত্যুবরন করেন। শেষ করার আগে আরো কিছু উদ্ধৃতি তুলে দিলাম আরে এক জায়গা থেকে- “গৌতম তাই শেষদিন পর্যন্ত, ১৯৯৫ থেকে ৯৯ সালের মধ্যে, নয় নয় করে, “আবার বছর কুড়ি পরে”, “ঝরা সময়ের গান”, “মায়া”, “ক্ষ্যাপার গান”, চ্যাংড়ামি নয়– চার-চারটে ক্যাসেট বার করেছে- করিয়েছে- নতুন-পুরোনো সবাইকে একসাথে নিয়েই। আর ওর নিজের ক্যাসেট বার করার অনেক নামী-দামী কোম্পানীর অনুরোধ, বিনয়ের সাথে, কখনো point-blank প্রত্যাখ্যান করেছে, ইতিমধ্যে, মাছি-তাড়ানো অনায়াসে। নিজের লেখা, সুর দেওয়া বৈদুর্য্যমণির মত চকচকে সব গান, যার ছটা ওর গলাতেই ছিটকে বেরোতো বেশী, সাধুসুলভ নিরাসক্তিতে গাইয়েছে অন্যদের দিয়ে- এক ফোঁটাও possessive না হয়ে”

 

২। প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়(বুলা)

প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি গৌতম চট্টোপাধ্যায় এর ভাই। অসাধারণ বংশীবাদক। তিনি ব্যান্ডের ভোকাল ছিলেন। তিনিও নির্মাতা, থিয়েটার এইসবে পারদর্শি ছিলেন। ‘বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ থেকে গ্র্যাজুয়েট পাশ করেন। ব্যান্ড ভেঙ্গে যাওয়ার পর কলকাতায় ইঞ্জিয়ারিং ফার্মে জয়েন করেন এবং এ সময় কাজের সুবাদে লিবিয়া, আবু ধাবি এইসব এলাকায় যান। সেখানে গান অন্বেষণের ইচ্ছা এবং ক্ষুধা তাঁকে নতুন ধরনের গানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরবর্তীতে মহীনের ঘোড়াগুলি’র পুনর্জাগরনে তিনি গৌতমের সঙ্গে থাকেন এবং বিভিন্ন কন্সার্টে অংশ নেন।

 


[প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়]

 

৩। বিশ্বনাথ(বিশু) চট্টোপাধ্যায়

গৌতম চট্টোপাধ্যায় এর ছোট ভাই। তিনি ছিলেন ব্যান্ডের ড্রামার। মহীনের সাথে থাকার সময় তিনি একজন ফ্রেঞ্চ গিটারিস্ট, Jean Perre Andre’র কাছ থেকে Jazz গীটার বাজানো শিখেন। তিনি Jumez নামক আরেকজনের কাছ থেকে Classical গীটার বাজানো শিখেন। পরবর্তীতে ব্যান্ড ভেঙ্গে যাওয়ার পর আমেরিকা চলে যান, পিএইচডি করেন এবং এখন স্যান ফ্র্যান্সিস্কোতে থাকেন। বে এরিয়াতে তিনি একটি Jazz ব্যান্ডের হয়ে ডাবল বেস বাজান।

 

৪। রঞ্জন ঘোষাল

গৌতম চট্টোপাধ্যায় এর কাজিন। ব্যান্ডের অন্যতম প্রধান সদস্য। মহীনের ঘোড়াগুলিতে তাঁর অবদান অপরিসীম। বিশেষ করে লিরিক্স লেখায় তাঁর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। প্রতিটি ব্যান্ডেই কেউ না কেউ থাকেন যারা ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেন। মহীনের ঘোড়াগুলি’র জন্য রঞ্জন ঘোষাল ছিলেন তাই। এখানে বলে রাখা ভালো ব্যান্ডের নাম ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ মূলত তারই রাখা। অঘোষিত ব্যান্ড ম্যানেজারও ছিলেন তিনি। গান লেখা এবং গাওয়ার পাশাপাশি তিনি প্রতিটি লাইভ কন্সার্ট আয়োজনের পিছনের মূল ব্যক্তি ছিলেন। সকল মিডিয়া সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো তিনিই দেখতেন। তিনি, সঙ্গীতা(পরবর্তীতে তাঁর স্ত্রী) এবং শর্মিষ্ঠা(পরবর্তীতে বুলা’র স্ত্রী) মিলে অ্যালবামের কাভার ডিজাইনের তৈরী করা, ব্যান্ডকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্র্যয়োজনীয় সকল উদ্যোগ নেয়া, যোগাড়পত্র করা ইত্যাদি করতেন।

 

ব্যান্ড ভেঙ্গে যাওয়ার পর তিনি বেঙ্গালুরুতে চলে আসেন এবং BHEL এ যোগ দেন। তিনি জয়দেভপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিঙে পড়েছিলেন। এখানে এসে তিনি বেঙ্গালুরু থিয়েটার ক্লাব ‘Forum Three’ এ যোগ দেন। পরবর্তীতে স্ত্রী সঙ্গীতা এবং বন্ধু উৎকল মোহান্তিকে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘Mareech Advertising’।

 


[রঞ্জন ঘোষাল এবং আব্রাহাম মজুমদার]

 

৫। আব্রাহাম মজুমদার

ওয়েস্টার্ন ক্লাসিকাল মিউজিকের উপর পড়াশুনা এবং বিস্তর গান ছিল আব্রাহাম মজুমদার এর। তিনি একজন স্বনামধন্য গানের শিক্ষক, অসাধারণ বেহালাবাদক এবং কলকাতার গানের জগতে এক পরিচিত ব্যাক্তিত্ব। ১৯৭০ এর দিকে তিনি কলকাতায় অক্সফোর্ড মিশনে পড়তেন এবং সেই স্কুল জীবনেই তাঁর বাবা, থিয়েডর মেথেইসন-এর কাছ থকে ওয়েস্টার্ন ক্লাসিকাল মিউজিকের উপর শিক্ষা নেন। পরবর্তীতে Trinity College of Music, London, থেকে বেহালার উপর ATCL এবং LTCL করে দেশে ফিরেন।

 

১৯৭৬ এর দিকে গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের সাথে তাঁর পরিচয় হয় এবং খুব স্বাভাবিক ভাবেই গানের জগতে একে অপরের সাথী হয়ে ওঠেন। তিনি ছিলেন মহীনের ঘোড়াগুলি’র সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। তাঁর বেহালার সুর গানগুলোর সাথে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। এ ব্যাপারে সাপ্তাহিক বর্তমানে ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত দেবজ্যোতি মিশ্রের একটি লেখা থেকে কিছু অংশ তুলে দিলাম, “অনেক পরিশীলিত, শিক্ষিত মিউজিসিয়ান ছিলেন “মহীনের ঘোড়াগুলিতে”, ‘ভালোবাসি’ গানের- আব্রাহাম মজুমদারের ভায়োলিন আজও কেউ শুনলে বুঝতে পারবেন কত ভিন্ন সেই বাজনা…”
ব্যান্ড ভেঙ্গে যাওয়ার পর তিনি কলকাতা বয়েজ স্কুলের গানের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এবং ১৯৮৩ সালে যোগ দেন ‘La Martiniee for Boys’-e এবং এখন পর্যন্ত সেখানেই আছেন। তাঁর একটি নিজস্ব ওরচেস্ট্রা রয়েছে।

 

৬। তপেশ বন্দোপাধ্যায় (ভানু)

আরেকজন মেধাবী ভোকাল, গীতিকার এবং গীটার বাদক ছিলেন তপেশ বন্দোপাধ্যায়। তিনিই একমাত্র সদস্য যিনি মধ্যবর্তী সময়ে ব্যান্ড ছেড়ে চলে যান। কারন হিসেবে বলা হয়ে থাকে ‘ক্রিয়েটিভ ডিফারেন্সেস’। যাই হোক, ব্যান্ড ছেড়ে তিনি নৌবাহিনীতে যোগদাইন করেন।

 

৭। তাপস দাস (বাপি)

তাপস দাস ব্যান্ডের লিরিক্সে অনেক অবদান রাখেন। তিনি গিটারিস্ট ছিলেন। ব্যান্ড ভেঙ্গে যাওয়ার পর বর্তমানে তিনি ছবি নির্মাতা হিসেবে কাজ করেন এবং কলকাতায় থাকেন।

 

৮। রাজা ব্যানার্জী

তাপস ব্যান্ড ছেড়ে চলে যাওয়ার পর রাজা ব্যানার্জী যোগ দেন। সে অর্থে তিনি অরিজিনাল ঘোড়া ছিলেননা। তিনিও গিটারিস্ট হিসেবেই যোগ দেন। তৃতীয় অ্যালবাম বের হবার সময় তিনি ব্যান্ডের সাথে ছিলেন এবং পরবর্তী কনসার্টে অংশগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি আটলান্টায় থাকেন।

 

এছাড়াও ব্যান্ডের সাথে আরো দু’জন আনঅফিশিয়ালি ছিলেন যাদের নাম উপরের লেখায় কয়েকবার এসেছে। তাঁরা হলে সঙ্গীতা ঘোষাল এবং শর্মিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়। ব্যান্ডের পিছনের কাজে তাঁদের যথেষ্ঠ অবদান রয়েছে।

 

• সঙ্গীতা ঘোষাল

মহীনের ঘোড়াগুলির তৃতীয় অ্যালবাম হল “দৃশ্যমান মহীনের ঘোড়াগুলি”। এটি ১৯৭৯ সালে মুক্তি পায়। এর মূল কভার ডিজাইন করেছিলেন সঙ্গীতা ঘোষাল। সঙ্গীতা ঘোষাল হলেন মহীনের ঘোড়াগুলির অন্যতম প্রধান সদস্য রঞ্জন ঘোষালের স্ত্রী। তিনি ব্যান্ডের প্রধান ডিজাইনার ছিলেন। এছাড়াও ব্যান্ডের গানগুলোকে ইংরেজিতে অনুবাদের দায়িত্ব ছিল উনার উপর। সেই সময় তিনি লরেতো কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স করছিলেন এবং পরবর্তীতে জাদাভপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “কম্পারেটিভ লিটারেচারে” মাস্টার্স করেন।

 

• শর্মিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়

সেইসময় সরকারি আর্ট কলেজে পড়ছিলেন শর্মিষ্ঠা। তিনি ব্যান্ডের পাবলিসিটি, অ্যালবাম আর্ট ওয়ার্ক, কন্সার্টের মঞ্চের ডিজাইন ইত্যাদি ব্যাপারগুলো দেখতেন। পরবর্তীতে বুলা চট্টোপাধ্যায়ের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন ব্যান্ডের ক্রিয়েটভ ভিজুয়াল ডিজাইনার।

 

এই হল মহীনের ঘোড়াগুলির ঘোড়ারা। শেষ করতে হলে যে তাঁদের উপরই ভরসা করতে হয়। তাঁদের কথা দিয়েই আজকের লেখা শেষ করছি,

 

আর, মহীনের ঘোড়াগুলি মাঝে মাঝে হাই তোলে,
হাঁটুমুড়ে ঘুমোয়ও বটে। অনাদরে পাশে পরে থাকে
গীটার, বাঁশি, ভায়োলিন, চিড়েগুড়। সেইসব ঘুমের মধ্যে
স্বপ্ন, স্বপ্নের ভেতরে ঘুম, আর তার মধ্যে থেকে
স্পন্দিত হতে থাকে সিম্ফনিক ইমোশন্স্‌, যাকে বলি
সংবেগ; সংবিগ্ন পাখিকুল উড়ে যায়। উড়ে যায় কিন্তু
কোথাও যায় না। নীচে ঘুমন্ত পৃথিবী নক্‌শী
শতরঞ্জের ছকের মতো পড়ে আছে; নয়াঞ্জুলিতে
শাদাশাদা ভয়ঙ্কর হাড়গোড়,
বাতাসে ষড়জন্ত্রময় শ্বাসশব্দ আর ক্ষুধার্ত মানুষের
শ্বাপদপ্রতিম চোখ, চোখগুলি, ঘুমহীন, যৌথভাবে
জেগে আছে।

SHARE

RELATED NEWS

Play Free Casino Video Slots Online casinos offer no-cost online casino video slots for many reasons. Video slots are designed to mimic the real experience of gambling as closely as they can. You will feel as if you’re actually pulling the trigger and spinning the reels to win cash. In addition, video slot machines provide […]

Read More

Top Online Casinos that Approve Bitcoin

Bitcoin has turned into one of one of the most popular kinds of electronic currency in recent years. As a decentralized cryptocurrency, it supplies a safe and confidential way for customers to make on-line deals. With its expanding appeal, many on the internet casino sites have actually started accepting Bitcoin as a payment method. In […]

Read More

What Is So Fascinating About Marijuana News?

What Is So Fascinating About Marijuana News? The Meaning of Marijuana News If you’re against using Cannabis test.com as you do not need to smoke you’re misinformed. As there is barely any cannabis left in a roach, some people today argue that the song is all about running out of cannabis and not having the […]

Read More

Play Slots Free Online: A Comprehensive Guide

If you’re a follower of casino video games and looking for a thrilling and safe way to take pleasure in the enjoyment of ports, playing slots totally free online is the ideal option. With the innovation of innovation, on-line casinos now offer an extensive collection of free slot video games that can be played from […]

Read More

Gambling Sites: A Comprehensive Guide to Online Betting

On the internet betting has come to be significantly preferred recently. With the comfort of playing from home and the excitement of winning real money, an increasing number of people are turning to betting websites to try their good luck. If you’re brand-new to the world of on-line betting or are seeking a reputable and […]

Read More